ডেস্ক রিপোর্ট: নিম একটি ঔষধী গাছ। নিম গাছকে “গ্রামের ঔষধালয়” বলা হয়, কারণ এতে অসংখ্য স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। অনেক দেশে এই গাছের প্রায় প্রতিটি অংশই ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন ঔষধে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের ডাল, শিকড়ের ছাল ও ফলকে টনিক হিসেবে শরীরের বিভিন্ন জীবাণু ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম গাছের ছালকে বেদনানাশক হিসেবে এবং ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্যেও এটি প্রচুর পরিমাণে বিখ্যাত । এমনকি নিম গাছের পাতা কুষ্ঠরোগ, ত্বকের আলসার, চোখের নানাবিধ ব্যাধি, পেট ব্যথা, ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ড ও ধমনীর নানা রোগ, জ্বর, মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং যকৃতের রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। কথিত আছে যদি কোন বাড়িতে নিম গাছ রোপন করা থাকে, তাহলে সে বাড়িতে রোগ বালাই কম হয়। নিম গাছের বহুবিদ উপকারীতা এবং অল্প কিছু অপকারীতা রয়েছে।
নিম গাছের উপকারিতা:
মৌখিক স্বাস্থ্য: নিমের নির্যাসে অত্যন্ত শক্তিশালী বীজবারক যৌগিক থাকে যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং মুখের গহ্বরের রোগ, মুখের দুর্গন্ধ এবং মাড়ির রোগ নিরাময় করতে পারে। নিমের শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল নির্যাস টুথপেস্ট, মাউথওয়াশ এবং মৌখিক স্বাস্থ্যের টনিকের তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
ত্বকের জন্য: ত্বকের জন্যও নিম গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যাবহার করা হয়। নিমের তেল শুষ্ক ত্বকের থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে এবং ত্বকের চুলকানি, লাল হয়ে যাওয়া হতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় নিমের তেল সাধারণত সোরিয়াসিস এবং একজিমার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিম তেলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উচ্চ মাত্রায় থাকে, তাই এটি সূর্যের অতিরিক্ত তাপ, পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের হাত থেকে অতি সহজেই মুক্তি পেতে সাহায্য করে এবং এটি ত্বকের সুরক্ষা করতে অতীব কার্যকর। নিম গাছের পাতার নির্যাস দিয়ে গোসল করা অনেক উপকারী।
ফোলা কমানোর ক্ষেত্রে: ঐতিহ্যবাহী আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসামতে, নিমপাতা, নিমের বীজ, নিম গাছের ছাল বিভিন্ন বাতের ব্যথা এবং ফোলাভাব কমায় এবং রোগের অগ্রগতি রোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল : নিমের বীজ এবং পাতার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ানাশক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য। নিমের ভেষজ গুণ মানুষের এবং পশুর রোগের বিনাশে কার্যকর। প্রাথমিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য ও ত্বক পরিষ্কার করার জন্য নিমপাতাগুলিকে গরম জলে দিয়ে স্নান করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো।
প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য: অনেক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে নিম তেল সহবাসের আগে এবং সহবাসের পরে, দুটি পরিস্থিতিতেই একটি বিশেষ কার্যকর গর্ভনিরোধক। এটি যৌন কর্মক্ষমতা বা লিবিডো ক্ষমতা কে প্রভাবিত না করে পুরুষ এবং মহিলাদের উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিমের তেল যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে।
উকুনের সমস্যায় সমাধান হিসেবে: নিম কার্যকরভাবে চুলের উকুনের নিরাময় করতে পারে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো করতেও খুবই উপযোগী। সাধারনত নিমের তেল ব্যবহার করা হয়।
আলসারের জন্য: নিমে শক্তিশালী গ্যাস্ট্রোপ্রোটেক্টিভ এবং এন্টিইউলেটর বৈশিষ্ট্য আছে যা আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ক্যানসার বা কর্কট রোগের জন্য: নিমপাতায় পাওয়া যায় এমন অনেক উপাদান ক্যানসারের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে। যেমন ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, কোরিসেটিন, আজাডিরাটিন, আজাডিরন, ডক্সনবিম্বাইড, কাইমাফেরল, ইত্যাদি।
নিমের কিছু অপকারীতা:
গর্ভাবস্থায় জটিলতা: আপনি যদি গর্ভবতী হন বা গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে আপনি যে কোনো রকমের নিম গাছের পরিপূরকগুলি খেতে পারবেন না।রোগপ্রতিরোধক তন্ত্রে নিমের সঙ্গে যোগাযোগ অত্যন্ত সক্রিয়। এটি শরীরের গর্ভবতী ভ্রূণকে নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে ।
শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়: নিমের কিছু পদার্থ শিশুদের মধ্যে রে-সিন্ড্রোমের উপসর্গের কারণ হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকে।
কিছু অপকারীতা থাকলেও সর্বোপরি নিম গাছ আমাদের জন্য অনেক উপকারী এবং এর বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার আমরা দৈনন্দিন জীবনে করে থাকি।