একজন মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ির ভেতরে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। সেই অভিযানে শিশুর খেলনার ভেতর থেকে জব্দ হয় প্রায় আট লাখ টাকার হেরোইন। পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে মাদক ব্যবসায়ী।
গত ১ আগস্ট ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরের বাড়িওয়ালাপাড়ায় পরিচালিত ওই মাদক উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ। তিনি বলেন, সেদিনের অভিযানে জব্দকৃত মাদকের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আসামিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া যায়নি। গৌরীপুর থানায় হস্তান্তর করে মাদক মামলা দায়ের করা হয়।
ইউএনও হাসান মারুফের বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়। তার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা জামাল হোসেন। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিষয়ে ¯œাতকোত্তর পাস মারুফ ৩৩ তম বিসিএসে প্রশাসনে যোগ দেন।
২০২০ সালের আগস্টে গৌরীপুরে ইউএনও পদে যোগদানের পরপরই মারুফের প্রতি স্থানীয় এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদের নির্দেশ ছিল মাদক নির্মূলে কাজ করার। সেই কাজটা তিনি করেছেন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথেই।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ইউএনও মারুফ মাদক নির্মূলে ৯২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। সাজা ও জরিমানা করেছেন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী সহ ২০৭ জনকে। উদ্ধার করেছেন বিপুল পরিমাণ মাদক। এসব অভিযানে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গৌরীপুর থানা পুলিশ।
হাসান মারুফ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে যেসকল অপরাধী নিজের অপরাধ স্বীকার করে শুধু তাদের সাজা দেয়া হয়। মাদকের পরিমাণ বেশি হলে ও অপরাধী অপরাধ স¦ীকার না করলে নিয়মিত মামলা হয়।
মাদক নির্মূলে ইউএনও’র আলোচিত অভিযান ছিল ফেনসিডিল উদ্ধার। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৩ জুলাই লকডাউন নিশ্চিত করতে গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম নিয়ে টহলে বের হই। পথিমধ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবকের গতিবিধি সন্দেহ হলে তাদের ধাওয়া করলে গাড়ি থেকে ব্যাগ সহ একজন পড়ে গেলেও অন্যজন পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও ব্যাগ থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। মাদকের পরিমাণ বেশি হওয়ায় মামলা হয় গৌরীপুর থানায়।
অভিযানের পাশাপাশি ইউএনও মারুফ মাদক নির্মূলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাদকবিরোধী সভা, উঠান বৈঠক, অনলাইন আলোচনা, সাইকেল র্যালি, ক্রীড়া ও বির্তক প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছেন।
মাদক নির্র্মূলে রাতেও ছুটে বেড়ান ইউএনও মারুফ। তিনি বলেন, গত ১১ আগস্ট পরিবারের সাথে রাতের খাবারের খেতে বসেছি। খবর আসে রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ী মাদক বিক্রি করছেন। গৌরীপুর থানা পুলিশের টিম নিয়ে অভিযান চালিয়ে চার পুড়িয়া হেরোইন সহ তাকে আটক করি। পরে ১৮ মাস জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে যখন অফিসে বসে কথা হচ্ছিল হাসান মারুফের সাথে। তখনি গোপন সংবাদ পান মাদকের। বিদায় নিয়ে জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর খ সার্কেলের পরির্দশক চন্দন গোপাল সুরের টিম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুপুরে দিকে জানালেন পৌর শহরের নতুন বাজার, রামজীবনপুর ও শালীহর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৩৫০ গ্রাম গাঁজা সহ চার মাদকসেবীকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
হাসান মারুফ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছে। তবে আইন প্রয়োগ করে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এরজন্য সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের নিরাময় ও পুর্নবাসনেও মনোযোগী হতে হবে।