Tags: ইঞ্জিনিয়ার, কারিগরি, কারিগরি শিক্ষা, কোর্স, ধ্বংস, পলিটেকনিক, মেয়াদ, শিক্ষা ব্যাবস্থা
ডেস্ক রিপোর্ট: ১২ আগস্ট ২০২২ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড: দীপু মনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে তিন বছরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী উনার বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
ব্রিটিশ ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির পর তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গঠিত হয়েছিল। এটি বর্তমানে ঢাকা পলিটেকনিক নামে পরিচিত। তখনকার সময়ে এই ইনস্টিটিউটে তিন বছরের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা হয়েছিল।বর্তমান বুয়েট তৎকালীন সময়ে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামে পরিচিত ছিল। তখন এখানে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু ছিল।
পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় পার হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গঠিত হয়। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরবর্তী সময়ে চার বছরে উন্নীত করা হয়। বিভিন্ন সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নিজেদের সামাজিক অবস্থান, মেধা ও যোগ্যতা অটুট রেখেছে। সেইসাথে দেশের উন্নতিতেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে তারা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রেও বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। চাকুরী ক্ষেত্রে কখনো গ্রেডের মান কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বা কখনও নিয়োগের ক্ষেত্রে জেনারেল স্টুডেন্টদের সাথে তুলনা করা হচ্ছে।
আমরা ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার হচ্ছি বারবার। সময়ে–সময়ে বিভিন্ন ভাবে আমাদের ভিতর পেরেক ঢুকানো হচ্ছে। হয়তবা কোন একটি প্রভাবশালী মহল এর পিছনে কাজ করছে। অথবা কারিগরি শিক্ষায় উদাসিনতাও এর পেছনে দায়ী থাকতে পারে।
ডিপ্লোমা কোর্সকে ইংরেজি মাধ্যম থেকে বাংলা মাধ্যমে রূপান্তরিত করা, বিভিন্ন অজুহাতে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল, বয়সের বাধা তুলে দেয়া, উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত রাখা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতার মাধ্যমে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে । কিন্তু এ দেশের সরকারি–বেসরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নিজেদের যোগ্যতা এখনো অটুট রেখেছেন।
কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই আন্তরিক। বিগত সময়ে এর প্রমান আমরা পেয়েছি, ১৯৯৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে তিন বছর থেকে চার বছরে উন্নীত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান স্বীদ্ধান্ত অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তর ডিপ্লোমা কোর্সকে তিন বছরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে আমাদের অস্তিত্বসংকটের পথ তৈরি করতে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলো করা হচ্ছে কেন?
কেন ডিপ্লোমা কোর্স ইংরেজি মাধ্যম থেকে বাংলা মাধ্যম করা হয়েছে?
কেন ডিপ্লোমা কোর্সের মেয়াদকে বার বার প্রশ্নবিদ্ব করা হয়?
কেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কম রাখা হয়েছে?
কেন কর্মক্ষেত্রেও কারিগরি শিক্ষাকে ছোট করে দেখা হচ্ছে?
কেন কারিগরি শিক্ষা মানেই ডিপ্লোমা কোর্স মনে করা হয়?
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও কেন ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য সরকারী পাঠ্যপুস্তক নেই?
এরকম আরও শত শত কেন এর উওর আমাদের জানা নেই। কারও বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের অবস্থান জানার এই আকুতি প্রতিটি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর বুকে!
“কারিগরি শিক্ষা কি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ? ”
আমরা আশা করি, সরকার, শিক্ষামন্ত্রী ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন এবং কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে বাস্তবসম্মত, যৌক্তিক ও টেকসই পদক্ষেপ নেবেন। এর মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর।
আমরাও তখন বুক ফুলিয়ে বলতে পারব,
“কারিগরি শিক্ষায় গড়ব দেশ,
পথ হারাবেনা বাংলাদেশ”
–
মো. জাহাঙ্গীর আলম শান্ত
প্রধান মুখপাত্র
স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স সেল, বিআইইএ।
এলামনাই, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।